Monday, October 3, 2011

Durga Puja of Hooghly

হুগলি

আরামবাগ খামারবেড় গ্রামের দুর্গাপুজো - দেবাশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়







দেবীপক্ষ থেকে রামায়ণ গান দিয়ে দুর্গাপুজোর শুরু। আরামবাগের খামারবেড় গ্রামের ১৩ ঘর ভট্টাচার্য পরিবারের এই পুজো ১৩-১৪টি গ্রামের আকর্ষণ। দশমী পর্যন্ত দেবীর আটচালায় রামায়ণ গান চলে। ব্যতিক্রম হলেই ক্ষমা নেই। শরিকদের কারও কিংবা গায়কের মুখ দিয়ে রক্ত উঠবে। পূজায় মন্ত্র উচ্চারণ বা পূজা সংক্রান্ত আচার-আচরণে ত্রুটি থাকলে সঙ্গে সঙ্গে মুখ দিয়ে রক্ত ওঠা, অসুস্থ হয়ে যাওয়ার হাজার রোমহর্ষক কাহিনি ছড়িয়ে আছে খামারবেড়ের এই পুজোকে কেন্দ্র করে।

পুজোর শুরু

এলাকায় ‘জাগ্রত’ বলে বিশেষ খ্যাত এই দুর্গাপুজোর বয়স ৫০০ বছর বলে দাবি করেছেন ভট্টাচার্য পরিবারের বয়স্করা। শ্রদ্ধা-ভক্তি এবং আতঙ্কের মিশেলে পারিবারিক প্রাচীন পুজোটি ক্রমশই সর্বজনীন পুজোর রূপ নিয়েছে।

পুজোর বৈশিষ্ট্য

সন্ধিপুজোর সময় বহু দূর দূরান্ত গ্রাম জয়রামপুর, বলরামপুর, বলুণ্ডি, কাষ্ঠদহি ইত্যাদি থেকে পুজো দেখতে আসেন মানুষ। অষ্টমী এবং নবমীর দিন পুজোপ্রাঙ্গণে কয়েক হাজার ভক্তের মধ্যে হতাশাগ্রস্ত এবং অসুস্থ মানুষের লাইন পরে যায় মায়ের পুজোর প্রসাদী ফুল সংগ্রের জন্য। সন্ধিপুজোয় দুর্গা - কালি হিসাবে পূজিত হন বলেই দুর্গার চার হাত, জানালেন ভট্টাচার্যরা। দুর্গার চারহাতে থাকে ত্রিশূল, চক্র, খড়্গ এবং সাপ।

ভোগ বিশেষত্ব

মহাষ্টমীর দিন মায়ের প্রসাদ হিসেবে ‘ভাত ভোগ’ হয়। রামায়ণ গায়ক প্রতিবছর একাদশী তিথিতে ‘রামরাজা’ গান শেষ করে মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করবেন ‘আসর ছেড়ে, মাগো যদি আমি অন্য আসরে গান গাই, মোর মাথা খাও তোমায় শিবের দোহাই’। এর পর দোহাই দিতে হয় মূর্তি শিল্পী এবং ঢাকিকেও। পূজারি ভট্টাচার্যরা নিজেরাই অন্যের অপরাধের আশঙ্কায় ১৩ ঘর ভট্টাচার্যর আবালবৃদ্ধবনিতা সকাল-সন্ধ্যা দু’বেলা প্রতিপদ থেকে ১০ দিন নাকখত দেবেন দেবীর আটচালায়।

সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী তিন দিনই পাঁঠা বলি হয়। পাঁঠা যোগাড়ে, কলা পাতা, বেল পাতা যোগাড়ে পর্যন্ত বংশানুক্রমে চলে এই পুজোয়। অন্য কোথাও উপার্জনের বেশি সম্ভাবনা থাকলেও দেবীর কোপে পড়ার আতঙ্কে রামায়ণ গায়ক থেকে শুরু করে বেলপাতা যোগাড়ে পুজোর দিনগুলো খামারবেড়ের জন্য ফাঁকা রাখেন। দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জন হয় গ্রামের পুকুরে ‘দুর্গার ঘাট’-এ। পুকুরের এই ঘাট সারাবছর সংরক্ষিত রাখা হয়। ঘাট সরানো নিষেধ। বিসর্জন পর্ব শুরু হয় কলা বৌ-এর বিসর্জন দিয়ে। বিসর্জন পর্ব শেষ হলে মহিলাদের কান্নাকাটি করার রীতি আছে।

No comments:

Post a Comment