Monday, October 3, 2011

Durga Puja of Hooghly

হুগলি

আরামবাগ ময়াল গ্রামের ‘জলকর’ রায় পরিবারের দুর্গাপুজো - দেবাশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়








পুজোর শুরু

সদগোপ প্রধান ময়াল গ্রামের রায় পরিবারের পূর্বপুরুষরা, দ্বারকেশ্বর নদ থেকে শুরু করে তমলুক পর্যন্ত বিভিন্ন নদনদী থেকে জলকর আদায়ের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। এবং এই জলকরের আয় থেকেই পুজোর সূচনা হয়েছিল বলে জানান গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহনলাল রায়। সেই আমলের এই নবাবী আদেশনামার জন্যই নাম হয় ‘জলকর রায়’। জ্ঞাতিভাইয়ের এই শরিকি পুজোর খরচের প্রায় ৫০ হাজার টাকা আসে দেবত্র জমিজমা এবং দু’টি পুকুরের মাছ চাষ থেকে।

পুজোর বৈশিষ্ট্য

এই দুর্গা প্রতিমার হাত দু’টি, মহিষাসুর নেই। ডাকের সাজে সজ্জিত। চালচিত্রের উপর বিভিন্ন দেবদেবীর চিত্র আঁকা। রীতি হল প্রতিমার মূর্তির মুখের আদল একই রকম হবে। পুরুষানুক্রমে কুমোররা মূর্তি গড়েন এখানে। ‘জলকর’ রায়বাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয় জিতাষ্টমীর পরের দিন। প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন পুজোটি এই নিয়মেই হয়ে আসছে বরাবর। পুজোর আড়ম্বর শুরু হয় প্রতিপদ থেকেই। এ দিন পরিবারের কুলপুরোহিত অষ্টধাতুর ভুবনেশ্বরী মাতার মূর্তি মূলমন্দির থেকে এনে দুর্গাদালানে স্থাপন করেন। লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশের মূর্তি অবশ্য মাটির। পারিবারিক এই পুজোয় কুমড়ো বলির সঙ্গে ছাগ বলি প্রথা আছে। সম্প্রতি ছাগ বলির নির্মম প্রথাটি বন্ধের জন্য স্থানীয় কিছু মানুষজন চেষ্টা চালাচ্ছেন। পুজোর ক’টা দিন নাড়ু, মুড়কি, ফল, মিঠাই বিতরণ পুজোটিকে মহোৎসবে পরিণত করে। তিনশো বছরের এই পুজোর একটিমাত্র রীতি পালন করা যাচ্ছে না বলে আক্ষেপ জলকর রায় পরিবারের। প্রথা ছিল প্রতিমা বিসর্জনের পর শঙ্খচিল দর্শন করে ঠাকুরদালানে ফিরতে হবে। কিন্তু গ্রামে এখন শঙ্খচিল বিলুপ্ত। অগত্যা ‘শঙ্খচিলের স্মরণ’ নিয়ে নদী ঘাট থেকে ফিরে আসতে হয়। বিসর্জনের পর রায়পরিবারের প্রত্যেককে বিল্বপত্রে লাল কালি দিয়ে দুর্গা নাম লিখতে হয়। তার পর শান্তিজল নেওয়ার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিয়ে উৎসব শেষ হয়।

No comments:

Post a Comment