উত্তর ২৪ পরগনা: বনগাঁ
বনগাঁর বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো - দেবাশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়
২০০০ সালে পুজোর আগে বন্যায় গোটা বনগাঁ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা ভেসে যায়। ষষ্ঠীর দিন কী ভাবে দেবীর বোধন করা হবে তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন ওই পরিবারের সদস্যরা। কারণ বোধনতলা জলের তলায় চলে গিয়েছিল। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের প্রবীণ সদস্যা শোভাদেবী বলেন, ‘‘কী ভাবে দেবীর বোধন হবে তা নিয়ে আমরা চিন্তিত ছিলাম। শিব মন্দিরের উঁচু ঢিবিতে বোধন করবার পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎই ষষ্ঠীর আগে বোধনতলায় দু’তিন হাত জল কমে যায়। নির্দিষ্ট স্থানেই বোধন করতে পেরেছিলাম আমরা।’’
বন্যার মধ্যে ১৩০ জন এই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদেরকে নিয়েই সে বার জমে উঠেছিল পুজো। কিন্তু বিসর্জন দেওয়ার আগে ফের বিপত্তি দেখা দেয়। প্রতিমা কী ভাবে পাশে নাওডাঙা নদীতে নিয়ে যাওয়া হবে তা ভেবে পাচ্ছিলেন না পরিবারের লোকেরা। হঠাৎই এক জেলে বউ সেখানে উপস্থিত হন, মাকে সিঁদুর পরানোর জন্য। তাদের সঙ্গে নৌকাও ছিল। সেই নৌকা করেই প্রতিমা বিসর্জন দিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
পুজোর শুরু
৩০০ বছর ছাড়িয়েছে পুজোর বয়স। বনগাঁর ছয়ঘরিয়ার গৌরহরি বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বপ্নে দেখা দিয়ে দেবী বলেছিলেন, তাঁর কোন রূপের পুজো করতে হবে! ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠাকুরদাদা, গৌরহরি বন্দ্যোপাধ্যায় এই পুজোর সূচনা করেছিলেন।
পুজোর বৈশিষ্ট্য
দুর্গার দশটি হাত থাকলেও কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দু’টি হাত বড়, বাকি আটটি হাত ছোট! দু’পাশের কাঁধে রয়েছে ছোট ছোট চারটি হাত। অনেকটা বিড়ালের হাতের মতো! সে কারণে এই দুর্গাকে বলা হয় ‘বিড়ালহাত দুর্গা’।
মহালয়ার পরের দিন, প্রতিপদে চণ্ডীর ঘট বসানো হয়। পুজোর দিনগুলিতে চলে চণ্ডীপাঠ। ষষ্ঠীতে বাড়িতে থাকা জোড়া শিব মন্দিরের নীচে বেলতলায় হয় দেবীর বোধন।বিসর্জনের আগে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা দেবীকে বরণ করেন। তার পর মহিলারা। নিয়ম মেনে দশমীর দিন আকাশে একটি সন্ধ্যাতারা উঠলেই বন্দ্যোপাধ্যায়বাড়ির প্রতিমা নাওডাঙা নদীতে বিসর্জন দিয়ে দেওয়া হয়। বিসর্জন দেখতেও বহু মানুষ ভিড় করে।
ভোগ বিশেষত্ব
অষ্টমীর দিন যাঁরাই ঠাকুর দেখতে যান তাদের সকলকে ভোগ প্রসাদ খাওয়ানো হয়। অতীতে পাঠাবলি দেওয়া হলেও এখন সে সব পাট চুকে গেছে। চিনি ও নাড়ু নৈবেদ্য দেওয়া হয়। অতীতে ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বহু গ্রামের মানুষের পুজোর দিনগুলিতে ঠিকানা ছিল এই বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি। কয়েক হাজার গ্রামবাসীকে খাওয়ানো হত, সেই পরম্পরা অবশ্য এখনও আছে। তবে আয়োজনের ব্যাপকতা কমেছে।
No comments:
Post a Comment