উত্তর ২৪ পরগনা: বসিরহাট
ব্রহ্মানন্দ মহারাজের বাড়ির পুজো - দেবাশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়
১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে বসিরহাটের শিকড়ার কুলিন গ্রামে জন্মেছিলেন আনন্দমোহন ঘোষের ছেলে রাখালচন্দ্র।পরবর্তীতে রামকৃষ্ণের মানসপুত্র রাখালচন্দ্রের নাম হয়েছিল ব্রহ্মানন্দ মহারাজ। তিনিই রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রথম প্রেসিডেন্ট মহারাজ। লোকে তাকে রাজা মহারাজ বলেই ডাকতেন। তিনশো বছর পার হয়ে ব্রহ্মানন্দ মহারাজের স্মৃতি বিজড়িত ঘোষ পরিবারের দুর্গাপুজো মহকুমার মধ্যে অন্যতম প্রাচীন পুজো।
পুজোর শুরু
ঘোষ পরিবারের বয়স্করা জানান, পুঁথিপত্র ঘেঁটে যতদূর জানা যায় ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মানন্দ মহারাজের বাড়ির পুজো শুরু হয়েছিল। দেবী চণ্ডীর পুজোর প্রথম উদ্যোক্তা ছিলেন জমিদার দেবীদাস ঘোষ।
পুজোর বৈশিষ্ট্য
ঘোষ বাড়িতে পুজো হয়ে চলেছে পরম্পরা মেনে। কথিত আছে প্রচলিত নিয়ম মানা না হলে নাকি ‘ক্ষতি’ অবশ্যম্ভাবী। কোনও পরিবর্তন করা হলেই আর রক্ষা নেই। পূর্ব পুরুষদের আমল থেকে এমন প্রবাদ মুখে মুখে চলে আসলেও তার সত্যতা প্রমাণ করতে গিয়েই নাকি একবার নবমীর দিনে ঘোষ পরিবারের দুই ছেলের মৃত্যু হয়েছিল। সেই থেকে আর কেউ সাহস করে পরিবর্তনের কথা ভাবেন না।
বংশ পরম্পরায় প্রতিমা তৈরি করেন ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের মানুষেরা। সূচনা পর্বে যে কাঠামোর উপর প্রতিমা নির্মাণ করা হয়েছিল, প্রতিবার সেই একই কাঠামোর উপরে প্রতিমা তৈরি হয়।
পুজোর শুরুতে দেবীর ঘট বসত মাটির আটচালা ঘরে। ওই ঘরেই পুজোর আয়োজন ও দেবীকে প্রতিষ্ঠা করা হত। পরবর্তীতে জমিদার কালীপ্রসাদ ঘোষ পাঁচ খিলানযুক্ত পুজোর দালান তৈরি করেন। ওই দালানেই নিয়ম নিষ্ঠার মধ্যে এখনও পুজো হয়ে আসছে।
দেবীর বোধনের দিন নিদ্রাকলস বসানো হয়। ঘট থাকে দশমী পর্যন্ত। পরিবারের বিশ্বাস পুজোর ক’দিন পুজোদালান পাহারা দেয় নিদ্রাকলস।
আগে এই পুজোয় বলি হত। তবে একবার বলির সময় এক কোপে পাঁঠার গলা না-কাটায়, বলি বন্ধ হয়ে যায়। সেইসঙ্গে পশুবলি প্রথার অবসান হয়।
দেবীর বিসর্জন দেওয়া হয় স্থানীয় একটি পুকুরে। পুজোর দিনগুলিতে মেলা বসে শিকড়া কুলিনগ্রামে।
ভোগ বিশেষত্ব
এই পুজোর ভোগ মূলত খিচুড়ি ও মরশুমি নানা তরকারির পদ। সঙ্গে লুচি-মিষ্টি-নাড়ু আর বিভিন্ন রকমের ফল।
No comments:
Post a Comment