Monday, October 3, 2011

Durga Puja of Mushidabad

মুর্শিদাবাদ

কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির দুর্গাপুজো - দেবাশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়








আঠারো শতকে এই রাজ পরিবার প্রতিষ্ঠা করেন অযোধ্যানাথ রায়। প্রায় দেড় দশক ধরে পুজোর ও রাজবাড়ির প্রাচীন জৌলুস ফেরানোর ব্যাপারে মনোনিবেশ করেছেন রাজবাড়ির বর্তমান বংশধর প্রশান্ত রায় ও তাঁর সহধর্মিনী সুপ্রিয়াদেবী। সুপ্রিয়াদেবী অবশ্য ‘রানিমা’ নামেই বেশি পরিচিত। মূলত তাঁর প্রচেষ্টাতে অতীতের গন্ধ আজ অনেকখানিই ফিরে এসেছে কাশিমবাজারের ছোট রাজবাড়ির পুজোয়।

পুজোর শুরু

রাজবাড়ির এই দুর্গাপুজো প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন। অযোধ্যানাথ রায়-এর পৌত্র জগদ্বন্ধু রায় ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান। তাঁর আমল থেকে কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির শ্রীবৃদ্ধির ও দুর্গাপুজোর শুরু।

পুজোর বৈশিষ্ট্য

রথের দিন কাঠামো পুজো আবশ্যিক। একচালার সপরিবার সাবেক দেবীমূর্তি। রাজবাড়ির মন্দিরে শুক্লা প্রতিপদ থেকে পঞ্চমী পর্যন্ত ৩ জন পুরোহিত চণ্ডীপাঠ করেন। ৩ জন পুরোহিত দুর্গানাম জপ করেন। আর প্রধান পুরোহিত বিল্ববৃক্ষের শাখার পুজোপাঠ করেন। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস সম্পূর্ণ হয়। সপ্তমীতে ঘট ভর্তি করে মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাজ পুরোহিত গোপাল রায় বলেন,‘‘সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে কুমারীপুজো ও সধবা পুজো হয়।”

তন্ত্র মতের এই পুজোয় আগে বলিদান প্রথা ছিল। পুরোহিত বলেন, ‘‘প্রায় ৩৭ বছর আগে রাজা কমলারঞ্জন রায়ের আমলে ঘাতকের অভাবে বলিদান প্রথা বাতিল করা হয়। সেই থেকে বলির অনুকল্প হিসাবে দেবীকে রুই মাছের ঝোল ও কাঁচা সন্দেশ নিবেদন করা হয়।”

তুলট কাগজে হাতে লেখা ৪৫ পাতার নিজস্ব পুঁথি থেকে মন্ত্র পড়ে পুজো হয়। নবমীতে পঙক্তি ভোজন ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়। দশমীতে মহিলাদের সিঁদুর খেলা ও অপরাজিতা পুজো হয়। দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের পর রাজবাড়ির সদস্যরা নাটমন্দিরে সমবেত হন। সেখানে তাঁদের আর্শীবাদ করেন রাজ পুরোহিত।

ভোগ বিশেষত্ব

সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী— তিন দিনই থাকে অন্নভোগের আয়োজন। সাদা ভাতের সঙ্গে থাকে ফ্রায়েড রাইসও। ডাল-ভাতের সঙ্গে থাকে আলু, পটল, বেগুন, কুমড়ো ও বড়া মিলিয়ে পাঁচ রকমের ভাজা, আলু-কপি, অথবা আলু-পটলের দোর্মা, পাঁচ তরকারি, রুই মাছের ঝোল, শাক, চাটনি, মিষ্টি ও পায়েস। নবমীর দিন ভোগের মেনুর সঙ্গে যুক্ত হয় মোচার ঘণ্ট, লাউ-চিংড়ি ও ইলিশ মাছের ঝোল, ভাপা ও ভাজা। সন্ধিপুজোয় থাকে খিচুড়ি, আলু, বেগুন, পটল ভাজা ও মাছ ভাজা।

No comments:

Post a Comment